মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে সৃষ্ট ক্ষতিকর পদার্থ ও তা নির্গমনের কারণে স্বাভাবিক পরিবেশের উপর প্রভাব পড়লে তাকে দূষণ বলে। পরিবেশ দূষণ বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। বায়ু দূষণ, জলদূষণ, শব্দ দূষণ এরমধ্যে অন্যতম।
বায়ু দূষণ
জল দূষণ
শব্দ দূষণ
আমরা এত দিন দূষণ শব্দটি শুনে এসেছি, কিন্তু এর মধ্যে আছে পরিবেশের হাহাকার। পরিবেশ যত দূষণ হবে ঠিক ততই প্রতিশোধ নেবে মানব তথা সমগ্র জীবকুলের উপর। এখন আমাদের অবস্থা এমন পর্যায়ে পরেছে আমরা যদি সঠিক পথে না চলি তা হলে ভবিষ্যতের যে কুফল পরবে তার জন্য দায়ি হবে সুধুই মানুষ, আর কুফল ভোগ সমগ্র জীবকুল।
আসুন আমরা জেনে নিই দূষণ প্রকারভেদগুলো।
- বায়ু দূষণ
- জল দূষণ
- মৃত্তিকা দূষণ
- আবর্জনা দূষণ
- তেজষ্ক্রিয় দূষণ
- শব্দ দূষণ
- আলোক দূষণ
- দৃশ্য দূষণ
- তাপ দূষণ
চাষের জমি ভরাট হয়ে নগরায়ন হচ্ছে, উন্মুক্ত সমুদ্র সৈকত বন্দী হচ্ছে চিংড়ী চাষের কারণে, পাহাড় কেটে গড়ে উঠছে বস্তি, অল্প যা কিছু কল-কারখানা আছে তার অশোধিত বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন নদী নালা। জীবন সংগ্রামের এই অস্থির কষাঘাতে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাপে প্রকৃতি হচ্ছে নিষ্পেষিত, শোষিত ও দলিত। ক্ষুদ্র আয়তনের আমাদের এই দেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃতি তথা পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিচালনা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাঁচা মরার সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কযুক্ত। বাস ট্রাক , লরি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া যত্রতত্র মুড়ির টিন, বাড়ি ঘরের ময়লা স্তূপের কারণে নদীপথে মান্দাতার আমলে লঞ্চ ষ্টীমার চলাচলের কারণে, স্যালো নৌকার আবির্ভাবের জন্য যেখানে সেখানে পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করেছে। বিশ্বের সর্বাধিক বায়ু দূষিত ১৫টি শহরের ১৩টি হলো এশিয়ায়। এই দূষণ এশিয়ায় বছরে ১০ লাখ লোকের মৃত্যুর কারণ।। আমরা সর্বদাই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবদ্ধির জন্য নিবেদিত। কিন্তু উন্নয়নের কেন্দ্র বিন্দু পরিবেশকে পাশ কাটিয়ে পরিবেশের উপর একছত্রভাবে জুলুম করে পক্ষান্তরে উন্নয়নের চাকাটির চলার পথই রুদ্ধ করছি। আজ তাই এহেন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সময় এসেছে। । শহর নগর এলাকা নির্মাণ বা সম্প্রসারণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি কারণে এর ফলে নালা, ড্রেন ইত্যাদি মাটি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং জমাট পানি উপচে পড়ে বিভিন্ন সমস্যার কারণ ঘটাচ্ছে। তাছাড়া পাহাড় কাটার কারণে স্থানে স্থানে ধস নামছে। সে পাহাড়গুলিসহ আশ পাশের পাহাড়গুলি ভংগুর হয়ে যাওয়ায় এদের স্থায়িত্ব হুমকির সম্মুখীন। পাশাপাশি নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে, তা বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব লোপ পাচ্ছে এবং জৈব বৈচিত্র বিলুপ্তির শেষ পর্যায়ে উপনীত হচ্ছে জল চলাচল তথা ঢালুতে জল নামায় যে প্রাকৃতিক নালাগুলি ছিল, সেগুলির অধিকাংশই ভরাট হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন বিশেষতঃ বাস ট্রাক থেকে নিঃসৃত কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণ ঘটায়। তাই ত্রুটিমুক্ত যানবাহনের মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও ত্রুটিপূর্ণ যানগুলো বাতিল করার মাধ্যমে বায়ু দূষণ কমানো সম্ভব। যানজট কমানোর জন্য গণ পরিবহনের আবশ্যকতা রয়েছে। ট্রাফিক জ্যাম এবং সড়কের উপর যত্রতত্র যানবাহনের কারণে বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পায়। জনস্বাস্থ্যের পর বায়ু দূষণের সরাসরি নেতিবাচক প্রভাবের সৃষ্টির ব্যাপারটি অনস্বীকার্য। শব্দ দূষণ শব্দ দূষণের কারণে মানুষের দৈনন্দিন জীবন দুঃসহ হয়ে পরেছে। বিভিন্ন পরিবহনের অনবরত বাজানো হর্ণ মানুষের শ্রবণেন্দ্রীয়কে করে তুলেছে অতিষ্ঠ। একটি সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতা ৪৫ ডেসিবল গাড়ির হর্ণের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে, হাইড্রলিক হর্ণ, ১৯৯৭ সালে তা আমদানি এবং বিক্রি বেআইনী ঘোষণা করা হলেও আজ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। চিকিৎসকদের মতে উচ্চ গ্রামের প্রতিদিন ৪০ সেকেন্ড করে শব্দ গ্রহণ করবে কিছু দিনের মধ্যেই শ্রবণ যন্ত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উচ্চ শব্দ মানবদেহের জন্য বিশেষ ক্ষতির কারণ। জল দূষণে আমরা জলকে দূষিত করে তুলছি প্রতিনিয়ত। শিল্পজাত বর্জ্য গার্হস্থ্য বর্জ্য ইত্যাদি নদীর জলকে ক্রমশ দূষিত করে তুলছে। নদীর তীরে গড়ে উঠেছে শিল্প কারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নদীর বর্জ্য পদার্থ পরিত্যাগস্থল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সমুদ্র দূষিত হয়ে পড়ছে লোকালয়ে আবর্জনা কীটনাশক রাসায়নিক পদার্থ, তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ, সমুদ্রগামী জাহাজ, সামুদ্রিক তেলখনির তেল নিঃসরনের কারণে সমস্ত বর্জ্য সমুদ্রে মাছের ডিম পাড়া সামুদ্রিক প্রাণী উদ্ভিদের দৃপ্তি ও বিকাশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে বিবিধ বর্জ্যের কারণে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা হ্রা্স পাওয়ায় সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে। বর্জ পরিবেশ দূষণে ক্ষতিকর পরিবেশ সংর্ক্ষণ আইন-১৯৯৫ এর আওতায় ১৯৯৭ সালে সরকার ঘোষিত কারকারখানার নির্গত ময়লা পানি ও বর্জ্য নির্গমনের গুণগতমান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিবেশেগত ছাড়পত্র কোন শিল্প প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়ার একটি অংশ একথা উল্লেখ করে সুপারিশ করা হয়েছে শিল্প কারখানার কঠিন তরল ও বায়বীয় বর্জ্য ফেলার যথাযোগ্য স্থান নির্ধারণ এবং এগুলো কঠোরভাবে কার্যকর করার জন্য পরিবেশ আদালত স্থাপন, পলিথিনব্যাগ পচনশীল না হওয়ায় সহজে বিনষ্ট হয় না। পয়ঃপ্রণালীর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পরিবেশের মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে। কঠিন বর্জ্য পদার্থ যেমন - বোতল, টিনের ক্যান, কাঁচ বা কাগজের সামগ্রী, রিসাইক্লিং এবং আবর্জনাকে সারের বর্জ্যকে রিসাইকল্ড কাগজে, বর্জ্য প্লাষ্টিককে বার্নিশের কাজে ব্যবহৃত নতুন রঞ্জক ও ডাবের খোসাকে জ্বালানিতে পরিণত করার প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করা। মেডিকেল বর্জ্য ফেলার যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ছাড়া কো্ন এলাকায় হাসপাতাল বা ক্লিনিকের নির্মাণের স্থান নির্দিষ্ট করতে না দেওয়া। উপযুক্ত পরিবহণ ব্যবস্থা আবর্জনা ফেলার নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি পর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন, মল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিবেশ সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার চালূ করা. অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ও পয়ঃনালা ব্যবস্থা আবর্জনা সংগ্রহ ব্যবস্থায় জটিলতা রয়েছে। আমাদেরকে এখন উন্নয়ন পরিবেশের সংঘাতের আবর্তে হোচট খেয়ে চলতে হচ্ছে। গোটাবিশ্ব আজ পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিঘ্ন। কারণ সুন্দর, দূষণমুক্ত পরিবেশ বিশ্বে প্রতিটি মানুষেরই কাম্য দ্রুত নগরায়ন ও শিল্পায়ন পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা যেভাবে দিন দিন বেড়ে চলছে তাতে করে অদূর ভবিষতেই পৃথিবী মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বিধিবিধান এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ দ্বারা উন্নত দেশগুলি তাদের পরিবেশ রক্ষা করছে। এদের মতো চলুন আমরাও চেষ্টা করি। একটু সচেতন হলে পরিবশটা রক্ষা করা খুব্ সহজ কাজ। বস্তুত বিগত কয়েক বছর দেশে পরিবেশগত সমস্যা যেমন প্রকট হয়েছে সাথে সাথে পরিবেশ বিষয়ে মানুষের আগ্রহও সচেতনতাও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নয়ন কর্মী এবং নীতি নির্ধারকদের মধ্যে পরিবেশের বিভিন্ন বিষয় বর্তমানে ব্যাপক গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে ।
তথ্য সূত্র- ইন্টারনেট।
-----------------------------END----------------------------
0 comments:
Post a Comment